ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
নিউরোএথিকস্ ল্যাবে জোরকদমে রিসার্চ চলছে। অনিমেষের ধ্যানজ্ঞান সবকিছু এখন এই প্রেম-পিল বা প্রেমের বড়ি বা ট্যাবলেট আবিষ্কারকে ঘিরে। আধুনিক যুগে মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যাটির সমাধান করে ছাড়তে অনিমেষ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বায়োটেকনোলজির সঙ্গে ফিজিওলজিকে অদ্ভূতভাবে মিশিয়ে মানুষের স্নায়ুকলার সঙ্গে প্রেমের রাসায়নিক দোস্তি পরখ করছেন তিনি। আর প্রেম বা অপ্রেমের মত স্নায়বিক অনুভূতির ফলে শরীরের রাসায়নিক ক্রিয়া বিক্রিয়ার চলন, গমন স্টাডি করছেন তাঁর টিম। জটিল রসায়ন। মানুষ প্রেমে পড়লে হিউম্যান ব্রেইনে একটি বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি তাঁরা লক্ষ্য করেছেন। আবার কেউ বহুদিন প্রেমে পড়েন নি তাদের ব্রেইনে সেই রাসায়নিক পদার্থটি সঞ্চার করিয়ে জীবনে প্রেমের জোয়ার আনতেও সক্ষম হবেন, এই আশা রাখছেন তাঁরা।
মানুষের মন আর শরীরের অভ্যন্তরে কি ঘটনা ঘটলে মানুষ প্রেমে পড়ে আর সেই ঘনিষ্ঠ প্রেম থেকে বিচ্ছেদ হলেই বা শরীরের অভ্যন্তরে দেহরসের সমীকরণ কিভাবে বদলে যায় তা নিয়েই তাঁদের রিসার্চ। আর সেটা বুঝতে পারলেই পরের ধাপ হল ওষুধ প্রয়োগ করে প্রেমের গতিবিধিকে কন্ট্রোল করা। যেখানে প্রেম ঘনীভূত হওয়া প্রয়োজন সেখানে ওষুধ দিয়ে তাকে যথার্থ বশে আনা অথবা যে অদরকারী প্রেমের সম্পর্ককে অবিলম্বেই ছেঁটে দেওয়া দরকার সেখানে ওষুধ প্রয়োগে প্রেমের সমীকরণকে উল্টোদিকে হাঁটতে বাধ্য করা।
এখানে অনিমেষের মুশকিল একটাই। প্রেমের মত নরম অনুভূতি মানুষ নামক জীবটির পক্ষেই প্রযোজ্য। তাই বাঁদর, গিনিপিগ বা ইঁদুর দিয়ে এই এক্সপেরিমেন্টের যথার্থতা স্টাডি করা দুষ্কর। সেক্ষেত্রে মানুষকেই কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু রক্তমাংসের কোন মানুষই বা হবে অনিমেষের গিনিপিগ? নতুন ওষুধের প্রকোপে যদি প্রাণহানি ঘটে? অথবা বিপজ্জনক কোন রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে দেহের ক্ষতি হয়?
না, না। আটঘাট বেঁধেই নেমেছে সে। পশুদের ওপর এই ওষুধ প্রয়োগ করে টক্সিসিটি লেভেল টেস্ট করেছেন তাঁরা। থিওরিও তাই বলছে। কোন প্রাণীর ক্ষতি হয় নি। মৃত্যু তো নয়ই। আর প্রেম? সেটা ত মানুষের শরীরে প্রয়োগ না করলে বোঝা যাবে না। কোন উপায় নেই।পশুপাখির আবেগ কি মানুষের মত জোরদার? তাদের অতীত নেই, ভবিষ্যৎ নেই। আছে শুধুই বর্তমান। তাই ভালোবাসাবাসি শুধুই রমণের সময়। তাৎক্ষণিক একটা মুহূর্ত। মানুষের আবেগ, বেগ দুইই প্রকট। পশুদের যেন কেবলই বেগ সর্বস্বতা। এখুনি খেতে হবে অথবা মৈথুনে মেতে উঠতে হবে। কিম্বা প্রতিমূহুর্তে আত্মরক্ষার তাগিদে নিজের ডিফেন্স মেকানিজম কে চাগিয়ে তোলা। আক্রমণ করতে হবে প্রতিপক্ষকে। তাই সদা জাগ্রত থাকা। প্রেমের মত সূক্ষ্ম অনুভূতির পরীক্ষা নিরীক্ষায় তারা বুঝি সাড়া দিতে পারবে না বলেই বিশ্বাস বিজ্ঞানীদের।
অনিমেষের বউ শুক্তিশুভ্রা নিজের কিউরিওসিটির বশে জানতে চাইত আগে আগে।মাঝেমধ্যে হঠাত করেই ল্যাবে হানা দিত। আড্ডা হত সকলের সঙ্গে।তারপর চা খাওয়া।বেশ সমবয়সী সকলেই। ভাল লাগত কোয়ালিটি টাইমপাস।
নিউরোএথিকস্ ল্যাবে অনিমেষ ছাড়াও জনা চারেক নিউরোসায়েন্টিষ্ট। অনিমেষ নিজে দুঁধে বায়োটেকনোলজিষ্ট। কি কাজ হচ্ছে বলত বাপু? জিগেস করলে সে বোঝাত শুক্তি কে।
মানুষের জীবনের প্রেম নামক রোমান্টিক অনুভূতি কোন রাসায়নিক প্রয়োগে জাস্ট জ্বলে ওঠে সেই ম্যাজিক পিল আবিষ্কারে মগ্ন তারা। আবার উল্টোটাও দেখতে হবে বৈকি। বিচ্ছেদ বা প্রেমে হার্টব্রেক । সেই ম্যাজিক পিল প্রয়োগে তাকে আটকাতে হবে অথবা ঘটাতেই হবে।
মানুষের দেহে ডোপামিন নামে একটি নিউরোহরমোন নিঃসৃত হয়। এটি ভালোলাগা, আনন্দের ফিলিংস এর মত কোমল অনুভূতির জোগান দেয়। আর সেই সঙ্গে এপিনেফ্রিন আর নর-এপিনেফ্রিন নামের আরো দুটি রাসায়নিক পদার্থ উত্তেজকের কাজ করে। এরা মানুষের হৃদয়ে ভালোবাসার তুমুল বৃষ্টি সঞ্চারিত করে।
এবার বুঝেশুনে, পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই কেমিক্যালস গুলি বাড়িয়ে কমিয়ে প্রেম-পিলের একজ্যাক্ট ডোজটি কন্ট্রোল করতে হবে।
অঙ্কের ছাত্রী শুক্তি হাসে। কোনো ইন্টারেস্ট পায়না এসবে। “আপনি আচরি ধর্ম পরকে শিখাও’ মনে মনে হাসে সে।
হাসতে হাসতে বলেছিল, বহুদিনের বিবাহিত জীবনে যাদের প্রেম অধরা তাদেরো কাজে আসবে এই ওষুধ?
অনিমেষ বলেছিল, আলবাত! সেই চেষ্টাটাই তো করে চলেছি আমরা অহোরাত্র।
শুক্তি বলেছিল, হঠাত করে প্রেমহীন জীবনে প্রেমের দীপাবলী জ্বলে উঠবে?
অনিমেষ বলেছিল, নয়ত কি? আমরা কি ভেরেণ্ডা ভাজছি নাকি?
শুক্তি বলেছিল, আবার ধর কেউ দীর্ঘদিন ভেবেই চলেছেন যে অসহনীয় কোনও প্রেম থেকে নিজের জীবনকে অব্যাহতি দিতে। মানে, তাদেরও বিচ্ছেদ তরাণ্বিত করবে এই ম্যাজিক ওষুধ ?
অনিমেষ বলেছিল, কাজ দেবে বৈকি।
আহা রে! মরে যাই। কত চেনা বন্ধুবান্ধব কষ্টে আছে। দেখি তাদের যদি কাজে আসে তবে। শুক্তি বলে
শুক্তিশুভ্রার এযাবৎ কিছুই ভাল লাগেনা। অনিমেষ না পারে তাকে বেশী সময় দিতে না পারে দিন কয়েকের জন্য বেড়াতে নিয়ে যেতে।
অনিমেষের যেমন কাজ। দিনদিন তার ল্যাব সর্বস্বতা যেন গ্রাস করছে তাকে। বিয়ের পর দুজনে বছরে একবার অন্তত কোথাও ঘুরতে যেত দিন সাতেকের জন্য। নিদেন শহরের কোনও রেস্তোরাঁয় গিয়ে ডিনার খেয়ে আসত। নিদেন একসঙ্গে বসে ট্যাবে শর্টফিল্ম দেখা?
শুক্তি একটা হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল। খুব দায়িত্ব তারও। আবার প্লাস টু এর ম্যাথস এর টিচার সে। তবুও অনিমেষ যেন আজকাল একটু একটু করে তার জীবন থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। একটা মেয়ে তাদের। সে ও দিল্লিতে ডাক্তারি পড়ছে। বছরের নির্ধারিত ছুটিতে বাড়ি আসে। শুক্তির শুধু স্কুল আর বাড়ি। অঙ্কের খাতা দেখা আর পেপার সেট করা। এই জীবন ছাড়াও শুক্তির জীবনের অনেকটা জুড়ে রয়েছে এযাবত তার জীবনের অধরা সৃষ্টিশীলতা… দু চার লাইন কবিতা লেখা।
অনিমেষ খুব হাসে শুক্তির এই কবিতা চর্চা দেখলে। বলে কী সব ছাইপাঁশ লেখ, আমার কাছে দুর্বোধ্য।আঁতেলের অর্থহীন বাক্যরচনা।
শুক্তি ভাবে, অনিমেষ কে নতুন করে ইম্প্রেশ করার কিছু নেই। তার লেখা কবিতা পড়ে অনিমেষ ভাল বলুক আর না বলুক তাতে তার কিচ্ছু আসে যায় না। শুক্তির ফেসবুকে হাজার দুয়েক বন্ধু। তার মধ্যে শ পাঁচেক ফ্যান ফলোয়ারস। তারা সে কবিতা পছন্দ করলেই হল। তাকে জীবনে বাঁচার রসদ খুঁজে দিয়েছে এই ফেসবুক। কবিতা লিখে শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। অতএব জীবনের শেষদিন অবধি এই নিয়ে সে বেঁচে থাকতে পারলেই হল। অনিমেষ থাকুক তার রিসার্চ ল্যাব নিয়ে। মেয়েটা থাকুক তার পড়াশুনোর চাপ নিয়ে। শুক্তির স্কুল, ম্যাথস আর স্টুডেন্টস নিয়েই জীবনের সব ওঠাপড়া। তার ফাঁকে এক ফোঁটা স্বস্তির আশ্বাস এই ফেসবুক।
ইদানীং অনিমেষ লক্ষ্য করেছে ফেসবুকে প্রিয়ম সিদ্ধান্ত নামে শুক্তির একজন স্টুডেন্টকে তার কবিতার নীচে গলে গলে পড়তে। ভাল ভাল কমেন্ট লিখে দিদিমণির কাছ থেকে আনুগত্য চায় সে? এত মুগ্ধতা কিসের্? অনিমেষ ভাবে। শুক্তির লেখায় এমন কিছু শব্দচয়নও নেই। ভাষার সারল্যও নেই। কেবল আবেগপূর্ণ চার পাঁচটি লাইন। কবিতার অর্থও পরিষ্কার নয়। শুক্তির কবিতা পড়ে অনিমেষের মনে হয় শুধুই হতাশা আর দুঃখবিলাসিতা । কি খোঁজে পাবলিক এই কবিতার মধ্যে? আর বিশেষত এই প্রিয়ম নামের ছেলেটি, কী দেখল শুক্তির এই কবিতা গুলোয়? অনিমেষ ভাবে আবার খেই হারিয়ে ভাটা পড়ে সেই চিন্তায়। নিজের কাজে ডুবে যায় অচিরেই। খাবার টেবিলে দুজনের যা দেখা সাক্ষাৎ হয়। শুক্তি খেতে খেতে হাতের ফোন নিয়ে খুটখাট করে। টুং টাং মেসেজ আর নোটিফিকেশনের শব্দ অনিমেষকে বিব্রত করে। ভাল লাগে না অনিমেষের। আগে এমন হত না। দুজনের কাজের পরিধির যত বিস্তার হল ততই গুমোট হল যেন বাড়ির পরিবেশ।
অনিমেষ আর শুক্তিশুভ্রার জীবনে প্রেম বেঁচে নেই বহুদিন ধরে। কেমন যেন আড়োআড়ো ছাড়ো ছাড়ো ভাব দাম্পত্যের রোজনামচায়। মধ্যবয়সে শরীর বাধ সাধে অনেক সময় কিন্তু তাই বলে মন? আজ তারা মানসিকভাবে এতটা দূরে সরে গেছে? নিজেকে অনিমেষ দায়ী করেনা তার জন্য। শুক্তিও তো অনিমেষ কে একটু বুঝতে পারত। কত বড় দায়িত্ত্বপূর্ণ গবেষণায় সে ব্যস্ত থাকে আজকাল? এই আবিষ্কার সফল হলে বিশ্ব সংসারে কত ডিভোর্স কেসের নিষ্পত্তি হতে পারে। কত টিন এজাররা বেঁচে যাবে আত্মহত্যার হাত থেকে। ম্যাজিক পিল খাবে আর রোগের হাত থেকে মুক্তি পাবে। হয় নতুন করে প্রেমে আহুতি দেবে নয়ত বিচ্ছেদে অবগাহন করবে। এই আশ্চর্য “প্রেম-পিল্’ জাগতিক সমস্ত প্রেমের ডায়নামিক্স এবং রসায়ন আমূল বদলে দেবে। তামাম বিশ্বের বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলে ওষুধ প্রয়োগে প্রেমের ভাষা পড়ে বোঝা এবং তাকে কন্ট্রোল করা, ম্যানিপুলেট করা এই প্রথম। অনিমেষ নোবেল প্রাইজ পেলেও পেতে পারেন। তাঁর সতীর্থ সহপাঠীরা যদিও ঠাট্টা করে বলে ‘‘তুমি আর তোমার টিম এই প্রথম হিউম্যান ইমোশানস কে মেকানিক্যাল বানিয়েই ছাড়ছ, গুরু’’
কেউ আবার বলেছে, “যত্তসব, খোদার ওপর খোদকারি’
অনিমেষের সে ব্যাপারে কোনো হেলদোল নেই অবিশ্যি। তিনি এই গবেষণার শেষ দেখেই ছাড়বেন। মানুষের কাজে এলেই সার্থক তিনি।
তিনি খুঁজেই চলেছেন সেই “এলিক্সির অফ লাভ’ নামের রাসায়নিক পদার্থটিকে যেটির প্রভাবে ঠিকঠাক ভাবে নরনারীর ভাব ভালোবাসা ঘনীভূত হয় যথার্থ প্রেমে। রাসায়নিক ভাষায় তার নাম লাভ এনহান্সার বা প্রেম বর্ধক আর যে রাসায়নিক বস্তুটির অভাবে জীবন থেকে ভালোবাসা উবে যায় সেটির নাম লাভ ব্লকার বা প্রেম রোধক । তাঁদের ম্যাজিক পিলটি এখানে কাজ করবে মডিউলেটর হিসেবে। যেখানে যেমন ডোজে প্রয়োগ করা হবে তেমনি হবে তার কাজ।
সাইকোলজিস্ট, রিলেশনশিপ বিশেষজ্ঞরা আস্থাবান অনিমেষের এই প্রোপোজালে। তাঁদের অহোরাত্র এইসব নিয়ে কাজ। ওষুধ পেলে বরতে যাবে তাঁদের লাখ লাখ ক্লায়েন্টস।
অবিশ্যি অনেকেই বলেছেন, এ আবিষ্কার ভিত্তিহীন। দোহাই বিজ্ঞান! প্রেম, রোমান্স আর রাসায়নিক প্রয়োগ? বুলশিট্! প্রেমে পড়া আর প্রেম থেকে বেরিয়ে আসা? দেবা ন জানন্তি, কুতো মনুষ্যাঃ! নিউরোসায়েন্স নার্ভের বাকী দিকগুলো দেখুক। প্রেম কে নয়।
অতঃপর অনেক ভেবেচিন্তে শুক্তিই হল টার্গেট। তার ওপরেই প্রথম পরীক্ষা চালাবে অনিমেষ। শুক্তির ভারচ্যুয়াল প্রেমিক ঐ প্রিয়ম্ নামের স্টুডেন্টটির ওপর মধ্যবয়সের এত ক্রাশ আর সহ্য করা যায় না। সুখের সংসার ছিল তাদের। শুক্তি এক সাবালিকার মা। এই বয়সে তার এ কি মতিভ্রম হল? ছেলের বয়সী একজন কে ভালো লাগতে শুরু করল? আর তাই অনিমেষকে দূরে সরিয়ে রাখল সে?
এইসব ভেবে তাদের নতুন আবিষ্কারের প্রেম-পিলের “ব্লকার’ টি সেদিন ডিনার টেবিলে নিয়ে আসে অনিমেষ। রান্নার মাসী গরম রুটি বানিয়ে ভরে রেখে যায় ক্যাসারোলে। একে একে তরকারী গুলো মাইক্রো ওয়েভে গরম করে আনে শুক্তি। সাধারণতঃ নিজেরাই দুজনে খাবার সার্ভ করে নেয় প্রতিদিন, নিজেদের ইচ্ছেমত, সবজী, পনীরের তরকারি, ঘুগনী ইত্যাদি। মাসী স্যালাড কেটে দিয়ে যায় টাটকা। টক দৈ বের করে দেয় ফ্রিজ থেকে। আর শেষপাতে একটু ঠাণ্ডা কাস্টারড ।
সেদিন শুক্তির কান থেকে ঝুলছে ইয়ারফোনের দুই সুতো। বুঁদ হয়ে গান শুনছে সে। তার রংচঙে হাউজকোটের মধ্যে রাখা সেলফোনে টুংটাং মেসেজ আসতেই থাকছে প্রতিদিনের মত । এই মেসেজ, নোটিফিকেশন যাওয়া এবং আসা দুইই খুব অপছন্দ অনিমেষের।
টুকটাক রিপ্লাই দিতে দিতে, গান শুনছে আর সেই সঙ্গে খাবার গরমও করছে শুক্তি । আর অনিমেষ সুযোগ বুঝে একটি কাঁচের বাটিতে সেই “ব্লকার’ প্রেম-পিল টি টুক করে রেখে তার মধ্যে এক টেবিল স্পুন ঠাণ্ডা কাস্টারড তুলে রেখেছে শুক্তির জন্য । শুক্তির সব দিকে চোখ ঘোরে। সে দেখেও না দেখার ভান করল। বুঝল আজ সে হবে অনিমেষের গিনিপিগ। আগে প্রিয়মের বিষয়ে দু একবার পুছতাছ করেছে অনিমেষ। পাত্তা দেয়নি শুক্তি। বুদ্ধি খুব তার। কায়দা করে এড়িয়ে গেছে। এই বয়সে তার এতদিনের জীবনসঙ্গী তাকে সন্দেহ করছে তবে।
শুক্তি ভাবে, দেখাই যাক। অনিমেষের সন্দেহ বাড়ছে বাড়ুক। অবিশ্বাসের লেখচিত্র তুঙ্গে উঠুক।
বেচারা তুখোড় বৈজ্ঞানিক ডঃ অনিমেষ তবে চেষ্টা করছে শুক্তির সঙ্গে তার ছাত্র প্রিয়মের সম্পর্কের একটা হেস্তনেস্ত করতে। অঙ্কের দিদিমণি শুক্তি । মাথায় বুদ্ধি খুব তার। এতদিন ফেসবুকে শুক্তির কবিতা লেখা থেকেই অনিমেষের যত্ত রাগ। আজ তাই অনিমেষ তার নিষ্পত্তি করতে উঠেপড়ে লেগেছে।
খাওয়া শুরু করল দুজনে। রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে আবারো মেসেজ। খাওয়া থামিয়ে বাঁ হাতের আঙ্গুলেই উভয় পক্ষের সংলাপ চলতে থাকে। অসহ্য লাগে অনিমেষের। আজকেই হেস্তনেস্ত হবে এই সম্পর্কের। রুটি সব্জি সব খাওয়া শেষ।
ব্লকার প্রেম-পিল সমেত সেই কাঁচের কাস্টারডের বাটিটি যতই সে হাত দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখে অনিমেষ ততই ছুতোয়নাতায় কথার মারপ্যাঁচে শুক্তিকে জব্দ করে সেটা খাওয়াতে ব্যস্ত হয়। এবার শুক্তির জেদ চেপে যায়। সে বলে বসে, কই? শুধু ব্লকার পিল দিলেই চলবে? এনহান্সার পিল কোথায় আছে দাও দেখি। আমার স্টুডেন্ট প্রিয়মের গার্লফ্রেন্ড রুচির সঙ্গে হার্টব্রেক হয়েছে। খুব কষ্টে আছে ওরা। ওরা দুজনেই আমার খুব ভাল স্টুডেন্ট। ফাইনাল ইয়ার ওদের। স্কুলে এই নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে। অনলাইন কাউন্সেলিং করছি আমি সারাদিন ধরে। ওদের রেজাল্ট খারাপ হয়েছে এবার। আমি চাই ওদের অ্যাফেয়ার টা আবারো জোড়া লাগুক। তা তোমাদের ল্যাবের আবিষ্কৃত এই প্রেম-পিল ওদের দিতে পারি তো?