হামিরউদ্দিন মিদ্যা
ছাদের উপর ভিজে কাপড়গুলো মেলতে-মেলতে সুজাতার চোখ চলে গেল হাইওয়েটার দিকে। সুজাতা দেখল এক বুড়ি হাঁটতে-হাঁটতে এসে প্রাচীরের দরজাটার সামনে দাঁড়াল। এখান থেকে সব কিছুই স্পষ্ট দেখা যায়। প্রাচীর ঘেরা একতলা বাড়িটার সামনে কিছুটা জায়গা জুড়ে উঠোন। প্রাচীরের ভেতরে বাথরুম,কলতলা,ধারে ধারে কয়েকটা পেঁপে গাছ।
সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে উঠোনে পা রাখতেই দরজা ঠোকার শব্দ পেল সুজাতা। মনে কিছুটা সংকোচ নিয়েই দরজাটা খুলল।বুড়ির তোবড়ানো মুখে সামান্য হাসি। কোথাকার কে অচেনা অজানা এক বুড়ি, পাগল-টাগল হবে হয়ত,মোটেই ভাল ঠেকল না।তাই একটু গম্ভীর হয়েই বলল, কাকে চান?
বুড়িটা বলল, আমাকে চিনতে নারছো বউমা? আমি তোমার টুনুপিসি।
টুনুপিসি? কই এই পিসির কথা সুজাতা তো কখনও শোনেনি। তাহলে কি কোনো ছদ্মবেশী মহিলা? ভুলিয়ে ভালিয়ে সুজাতার মন জয় করে ঘরে ঢুকে পড়বে এবং দুর্গাপুরের সর্মেলী কাকীমাকে যেভাবে নাকে গ্যাস দিয়ে অজ্ঞান করে সোনা-দানা,টাকা-কড়ি সব লুট করে পালিয়েছিল সেইভাবে….। কথাটা ভাবতেই শিরদাঁড়া দিয়ে একটা হিমেল স্রোত বয়ে গেল।
বুড়িটা বলল, কী টুকটুকে লাগছে বউমা, সেই বিয়েতে দেখেছিলাম।
সুজাতা মনে করার চেষ্টা করল,কিন্তু কই আগে কখনও দেখেছে বলে তো মনে পড়ছে না। কে এই বুড়িটা? অবেলায় এসে যত্তোসব জ্বালাতন জুড়েছে!
বুড়িটা এবার ভ্রু কুঁচকে তাকাল, দীপু ঘরে নাই?
না, ও এখন অফিসে আছে। আপনি সন্ধ্যায় আসুন, তাহলে ওর দেখা পাবেন।
বুড়িটার মুখে চিন্তার ভাঁজ পড়ল,কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবল,তারপর নিজের মনেই ঢুকে পড়ল পাশ কাটিয়ে।সোজা কলতলায় হাজির হয়ে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা নিল। এমন হাব-ভাব দেখাচ্ছে যেন এবাড়ির সবকিছুই ওর চেনাজানা।বুড়িটা এবার কাপড়ের আঁচলে মুখ মুছে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, তা হ্যাঁ বউমা, ক’মাস চলছে এখন?
সুজাতা রেগে কটমট করে বুড়ির দিকে তাকাল। জবাব দেয়ার আগেই ফিক-ফিক করে হেসে ফেলল বুড়িট,তারপর বলল, এই প্রথমবার তো একটু কষ্ট হবেক, তবে একদম চিন্তা কর না বউমা সব ঠিক হয়ে যাবেক।
বলতে বলতে ঘরে ঢুকল। যেন বাপুতি ঘর। সুজাতা জানে এবার সেই বুড়িটার মতো ঘরের জিনিসপত্রের প্রশংসা করবে,তারপর গল্পে মাতিয়ে দেবে,সেই ফাঁকে ঝোলাটায় হাত ভরে…..। আর কিছুই ভাবতে পারল না। তবে এই বুড়িটার হাতে কোনো ঝোলা-টোলা নেই,খালি হাতেই ঢুকেছে। আসলে হয়েছে কি অবিনাশদের বাড়ির ঘটনাটা, মানে অবিনাশের মা সর্মেলী কাকীমার ব্যাপারটা ঘটে যাবার পর থেকেই সুজাতা খুব সাবধানে, সতর্ক হয়ে থাকে। সুজাতার বিয়ের আগের বছর পাশের বাড়ির বাসিন্দা অবিনাশদের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল, সর্মেলী কাকী গ্রীষ্মের এক দুপুরে এক বৃদ্ধাকে জল খেতে চাওয়ায় ঘরে বসতে দিয়েছিলেন। কাকু অফিসে,অবিনাশ কলেজে, ফলে একদম একাই ছিলেন তিনি।সেই ফাঁকেই বুড়িটা….।
সুজাতার এখানে বিয়ে হয়ে যাবার পরও সেই শহুরে অভ্যেস গুলো যায়নি। এখানে সারাদিন একা একা থাকতে হয়,দীপ্তম যতক্ষণ না অফিস থেকে ফেরে।দরজায় খিল দিয়ে থাকলেও মনে স্বস্তি নেই। কেউ এলেও হুট-হাট দরজা খুলে না।কিন্তু এই বুড়িটা প্রায় জোর করেই ঢুকে পড়েছে বলতে গেলে, তাই কি করবে কিছুই খুঁজে পেল না সুজাতা।
ঘরে ঢুকেই বুড়িটা চারিদিকে অবাক হয়ে তাকাল,তারপর চোখগুলো বড় বড় করে বলল, ও মা-আ, কী সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছ গো! তা রাখবে না কেন,লক্ষ্মী বউ যে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে ধরা গলায় বলল,মনীশ তো বউকেও হারাল, নিজেও আধবেলায় গেল। যদি এই সব দেখে যেতে পারত! আসলে কী জানো মা,ভগবান ভাল মানুষদিকেই আগে তুলে নেয়।
বুড়িটা গজর-গজর করতে করতে সোফাটাতে বসল।
আবার শুরু করল,আগে একেবারে আলুথালু হয়েছিল ঘরটা,একটা মেয়ে মানুষ না থাকলে ঘরের শ্রী থাকে?মেয়ে হল ঘরের লক্ষ্মী।
একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সুজাতা।যায় হোক বুড়িটার সঙ্গে এবাড়ির নিশ্চয় কোনো একটা সম্পর্ক আছে। না হলে শ্বশুর, শাশুড়ির নাম জানল কী করে? ফ্যানটা অন করে দিয়ে ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা জল এনে বুড়িটাকে দিল। কৌতূহলটা বেড়ে গেল আরও দ্বিগুণ। শব্দের কঠিন জড়তা গুলো ভেঙে দিয়ে সহজ গলায় একেবারে আপনি থেকে তুমিতে নেমে এল সুজাতা।
পিসি তোমাকে ঠিক চিনতে পারলাম না, কোথায় বাড়ি বল তো তোমার?
তা কি করে চিনবে বউমা,এই বাড়ি তো আসা-যাওয়া বন্ধই করে দিয়েছি।তোমার শ্বশুর যতদিন বেঁচেছিল খবরাখবর নিত,আমিও আসতাম মাঝে-সাঝে।দীপুটা কোন খবরই নেয় না,সেই বিয়ের সময় একবার বলে এসেছিল,সেই থেকে আর পাত্তা নাই।
দীপ্তমের এই পৈতৃক বাড়িটা গ্রাম থেকে বেরিয়ে রাস্তার ধারেই। সচরাচর মানুষের ভিড় এখানে কম,আশেপাশে কোন লোকালয় নেই, চারিদিকে সবুজ ধানক্ষেত আর দূরে দূরে গ্রাম।ধানক্ষেতের বুক চিরে হাইওয়েটা এঁকেবেঁকে চলে গেছে শহরের দিকে।শুধুমাত্র দু’একটা ধাবমান গাড়ি,পথচলতি মানুষজন ছাড়া একেবারেই শুনশান, নিরিবিলি। দীপ্তমের বাবা মণীশ দত্ত ছিলেন কাছেই মফস্বল শহর আশুড়ের প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক। আগে গুড়ুলবাদে পূর্বপুরুষ আমলের ভিটেমাটি সবই ছিল,কিন্তু তা সইল না।প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝগড়া-ঝামেলা লেগেই ছিল। তবুও দীপ্তমের ঠাকুমা,দাদু যতদিন বেঁচেছিল ততদিন ওবাড়িতেই মুখ বুজে কাটিয়েছিলেন অনেকগুলো বছর। এমনকি বিয়ে-সাদী, দীপ্তমের জন্ম সব ওবাড়িতেই। তারপর একটু আয় উন্নতি হলে ভিটেমাটির পাট চুকিয়ে দিয়ে, গ্রাম থেকে অনেকটা বেরিয়ে রাস্তার ধারের দশকাঠা জমিটা বুজিয়ে এই বাড়িটা করেছিলেন।ওই বাড়িতে শৈশব-কৈশর অতিবাহিত হলেও এখানের জল-হাওয়াতেই দীপ্তম বড় হয়েছে। গুরুলবাদের মানুষজনদের সঙ্গে তেমন পরিচয় নেই,সবাইকে চেনেও না, বাবার পরিচয়েই পরিচয়।
দীপ্তমের মা মারা গেছে বছর পাঁচ আগে,বাবার একদেড় বছর হয়ে গেল। কাছের মানুষগুলো যখন একে একে দূরে সরে গেল তখন দীপ্তমের পাগলের মতো অবস্থা। দীপ্তমের কাকা-জ্যাঠা কেউই নেই, বাবাই ছিলেন বংশের একমাত্র প্রদীপ, দীপ্তমও সেটা রক্ষা করেছে। মামারা সব বিপদের সময় দু’চারদিন পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, তারপর যে যার মতো সরে পড়েছিল।আসলে মা মারা যাবার পর থেকে ওদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ থাকেনি। সেই ঘোর বিপদে বাবার বন্ধু নীলেশ কাকু পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। পরে ওরই কোম্পানিতে একটা চাকরী জোগাড় হয়ে যায়। সেই নীলেশ কাকু-ই এখন শ্বশুর মশাই।
দীপ্তম বাড়ি ফিরলে সবকিছু খুলে বলল সুজাতা। দীপ্তম শুনেও তেমন আগ্রহ দেখাল না।
একটুক্ষণ নীরব থেকে বলল, তুমি থাকতে বলনি?
বলেছিলাম তো, কিছুতেই থাকল না। বলল, একা মানুষ, ঘর ফেলে এসেছে।
অনেকদিন পরে এল। বাবার মামাতো বোন। বাবা বেঁচে থাকতে তখন খুব আসত, লাস্ট এসেছিল আমাদের বিয়ের দিন,তুমি হয়ত দেখে থাকবে,তোমার মনে নেই। একদিনই ছিল তো। এখন আর কোন যোগাযোগ নেই। তবে মাঝে-মধ্যে আসুড়েতে দেখেছি। কথা-টথা বলা হয়নি।
জানো বুড়িটা ঘরে ঢুকে যা আদিখ্যেতা জুড়েছিল, তোমাকে কী আর বলব… এটা ওটা নাড়া-চাড়া, সারাক্ষণ কী বকবক করছিল!আমি তো প্রথমে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, সেই সর্মেলী কাকীমার মতো যদি…বলে ফিকফিক করে হেসে ফেলল সুজাতা।
তুমি পিসিকে ওরকম ভেবেছিলে? তা যা বলেছ,ফাঁকা জায়গায় ঘর, তার ওপর একা থাকো। তবে কেন এসেছিল কিছুই বলল?
না কিছুই তো বলল না, তবে তোমাকে খুব শীঘ্রই একবার দেখা করতে বলল।
আমাকে যেতে বলল? কেন বল তো, কী এমন দরকার?
তা তো কিছুই বলল না।
দীপ্তম আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগল। পিসির কী এমন দরকার থাকতে পারে তার সাথে? টাকার প্রয়োজন পড়েছে কি?
জানো সুজাতা পিসির কোনো ছেলেপুলে হয়নি, বিধবা হয়ে যাবার পর খুব কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে আছে।
সুজাতা কৌতূহলী হয়ে দীপ্তমের চোখে চোখ রাখল, কী করে তাহলে?
পিসেমশাই এর মাঠে দু’তিন বিঘা জমি ছিল,জুয়ার নেশায় সব চলে গেল।আসলে ছেলেপুলে না হওয়ায় পিসির প্রতি ধীরে ধীরে বিতৃষ্ণা জমে উঠেছিল।নিঃসন্তান হওয়ার একটা চাপা দুঃখ পিসেমশায়কে কুরে কুরে খেত।সেই দুঃখেই বোধহয় মদ,গাঁজা খাওয়া ধরেছিল,একে একে সবকিছু শেষ হয়ে যায় ।ফতুর হয়ে যাবার পর একটা গুমটি খুলে পান বিড়ির।সেই গুমটিটা পিসি চালায় এখন।তাছাড়া আর কোন উপায় থাকেনি পিসির।
তোমরা কোন সাহায্য করনি?
বাবা যখন বেঁচে ছিল তখন মাঝেমধ্যে আসত আমাদের বাড়ি।জ্বালা যন্ত্রনার কথা শোনাত।বাবা কিছু কিছু সাহায্য করত।পরবে-পালায় পোশাক-আশাক,কিছু টাকাকড়ি বাড়ি বয়ে দিয়ে আসত।বাবা মারা যাবার পর আসে না আমাদের বাড়ি,কেন কে জানে!আমিও তো কোন যোগাযোগ রাখি না।
একটু থেমে দীপ্তম আবার কথা বলে, জানো সুজাতা, পিসি তখন বাবাকে বলত, মণীশ এখন আমার পোড়া কপাল,তুই ছাড়া আমার আর সাত কুলে কেউ নাই। মরে যাওয়ার আগে তোর ছেলের নামে ঘরবাড়িটা অন্তত লিখে দিয়ে যাব। তারপর একটু হেসে বলত, দীপু আমার বউকে নিয়ে শহরে থাকবে।
দীপ্তমের মনের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারছে যে অভিসন্ধিটা,সেটা যেন টের পেয়ে গেছে সুজাতা। ওর মনের মধ্যে একটা খুশির ঝিলিক বয়ে যায়। বলল, তাহলে তো দারুণ হয় গো! এই নিরিবিলি নির্জন জায়গা থেকে মুক্তি পাব আমরা।
দীপ্তম একটু ম্লান হাসল সুজাতার যুক্তিপূর্ণ কথা শুনে। কেননা দীপ্তম যেহেতু এখানেই মানুষ হয়েছে তাই ওর পক্ষে এখানের হাওয়া বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে কোন অসুবিধা হয় না, এই নির্জন পরিবেশে থাকা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছে। কিন্তু শহুরে পরিবেশের মেয়ে সুজাতার যে এখানে থাকতে অসুবিধা হয় সেটা অনেক বারই টের পেয়েছে।
বিয়ের আগে সুজাতাকে নিয়ে ওর বাবা যখন ঘুরতে এসেছিল এখানে, তখন একদিন সন্ধ্যের আড্ডায় ছাদে বসে গল্প করতে করতে সুজাতা দীপ্তমের গলাটা জড়িয়ে ধরে বলেছিল,কী করে থাকো এখানে? আশেপাশে কোন বাড়ি নেই,কাছাকাছি কোন দোকান নেই,বাড়ির পেছনে শুধু মাঠ আর মাঠ।
দীপ্তম আশ্বাস দিয়ে বলেছিল, এই তো চাকরিটা পেলাম, একটু আয় উন্নতি করি,পরে শহরে কোথাও বাড়ি কিনব।
আর এই বাড়িটা?
এই বাড়িটা আমি বেচব না সুজাতা। এই বাড়ির সঙ্গে আমার, বাবার, মায়ের কত যে স্মৃতি জড়িয়ে আছে জানো? বাবা মায়ের শেষ চিহ্নটুকু আমি মুছে ফেলতে পারব না।
তাহলে এই বাড়িটা পড়ে থাকবে?
থাকল বা ক্ষতি কী? শহরের পরিবেশে আমরা যখন হাঁপিয়ে উঠব তখন এই বাড়িটায় আমরা হাওয়া বদল করতে আসব মাঝে-মাঝে, কি বলো?
দীপ্তমের মনে আছে কথাটা শুনে সুজাতা খুশিতে ফেটে পড়েছিল এবং সেদিনই প্রথম নরম ঠোঁট দুটোর স্পর্শ পেয়েছিল।
আজ রবিবার,ছুটির দিন। দীপ্তম ঠিক করল টুনুপিসির সঙ্গে দেখা করে আসবে, তাছাড়া আজ এমনিতেই হাট বাজার করার জন্য আশুড়ের বাজার যেতে হত; কাজেই বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল দীপ্তম।
এই মফস্বল শহরটাতে সপ্তাহে অন্তত দু’দিন আসতেই হয়। তবুও টুনুপিসির সঙ্গে কোনদিন দেখা করা হয় না, নিজের পিসি নয় বলেই হয়ত গ্রাহ্য করে না দীপ্তম। সপ্তাহের শেষে হাট-বাজার করা,ব্যাঙ্কের কাজ, রাস্তার মানুষজনের ভিড়ে ফুরসুত হয়ে উঠে না। কোনদিন দেখেছে মোড়ের কাছে কালো রঙের গুমটিটায় টুনুপিসি বসে পান-বিড়ি বিক্রি করছে।
মোড়ের কাছে এসে দেখল পিসির গুমটিটা বন্ধ।রবিবারে সবদিন খোলে না। বাইকটা দোকানের পেছনে স্ট্যান্ড দিয়ে পিসির বাড়ির দিকে এগোল দীপ্তম।বিয়ের নিমন্ত্রণ করতে এসে ঠিক যেমনটি দেখে গিয়েছিল, একতলা প্রাচীর ঘেরা পুরাতন রংচটা বাড়িটা ঠিক একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে,খালি বাড়ির পাশের অশ্বথ গাছটা তখন পাতা ঝরিয়ে ন্যাড়া হয়ে গিয়েছিল,আর এখন গাছভরা সবুজ পাতা। খালি এইটুকুই পরিবর্তন চোখে পড়ল দীপ্তমের। রেলিংটা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে একবার চেয়ে দেখল চারিদিকে, তারপর রান্নাশালের দিকে চোখ পড়তে পিসিকে দেখতে পেল। পিসি রান্না চাপিয়েছিল।
দীপ্তমকে দেখে টুনুপিসির চিমসানো গাল আর কপালের অজস্র কুঞ্চনের মাঝে ফ্যাকাসে চোখদুটি সামান্য সময়ের জন্য উজ্জ্বল দেখাল, মৃদু হেসে বলল, আমি জানতাম তুই আজ আসবি, আমিও আজ দোকান খুলিনি। একটু থেমে আবার বলল, তা বাবা ছুটির দিনে বউকেও তো সঙ্গে করে আনতে পারতিস।
না পিসিমা, আসলে এখন ওর বেরনো নিষেধ, ডাক্তার বারণ করেছে।
পিসি মুখে চুকচুক শব্দ করে বলে, আহা বেচারি আমার! একটু সাবধানে রাখিস বাবা, তুই তো সারাদিন অফিসে থাকিস, ওকে একা থাকতে হয়। এইসময় ওর বাবা মায়ের কাছে রেখে আসতে পারিস তো।
বলেছিলাম পিসি, ও বলছে এখানেই থাকবে। ওর বাবা-মা’র সঙ্গে কথা হয়েছে এ’ব্যাপারে। তাছাড়া অসুবিধার কিছুই নেই,কাছেই নার্সিংহোম, হাসপাতাল সবই আছে।
সুজাতার বাবা মা দুজনেই অফিস করে,ভাইটাকে ডাক্তারি লাইনে পড়াচ্ছে। ওদের ভীষণ ব্যস্ততা। মেয়েটাকে বিদায় করেই যেন সমস্ত দায়দায়িত্ব শেষ। সুজাতা নিজেও জানে ওখানে কেমন সেবাযত্ন পাবে,সারাদিন একাই থাকতে হবে। তাই ও বাবা-মাকে জেদ ধরে বলেছে এখানেই থাকবে। এই সব কথা পিসিকে জানায় না দীপ্তম।ঘরের ভেতর ঢুকে তক্তাপোশটায় বসতে বলল পিসি,দীপ্তম বসল। পিসি খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে ভালবাসে। ঘরের সবকিছু পরিপাটি করে গুছিয়ে রেখেছে। মা মারা যাবার পর যখন দীপ্তমদের বাড়ি যেত তখন ঘরগুলো গুছিয়ে দিয়ে আসত।
দেওয়ালে টাঙানো একটা ছবির দিকে চোখ পড়ল দীপ্তমের, পিসেমশায় এর সঙ্গে তোলা পিসিমার একটা যুগল ছবি। কী ভালোবেসেই না কাঁধে হাত রেখে ছবিটা তুলেছিল। কিন্তু শেষে পিসেমশায় ওরকম বদলে গিয়েছিল কেন? কথাটা ভাবতে-ভাবতে পিসির ডাকে চমক ভাঙল।
বলে,ভাত হয়ে গেছে, এখানেই চারটি খেয়ে নে বাবা।
না পিসিমা, আজ আর না, অন্যদিন খাব। বাজারে একটু কাজ আছে।
আঃ মরণ আমার! শুধু কাজ আর কাজ। পিসি বাঁচল না মরে গেল সে খবর রাখিস?
খুব লজ্জা পেল দীপ্তম। কথাটা খারাপ বলেনি পিসি। কতবার তো আশুড়ে আসা হয়, কই কখনও তো পিসির বাড়ি আসা হয়নি।একটু কাঁচুমাচু মুখ করে বলে, পরশুদিন গিয়েছিলে, সুজাতা বোধহয় চিনতে পারেনি তোমাকে, সেই বিয়ের সময় গিয়েছিলে তো ওর মনে নেই।
হ্যাঁ বাবা চিনতে পারেনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, আসলে একটা দরকারে গিয়েছিলাম বাবা তোর সঙ্গে কথা বলতে।
কী এমন দরকার গো পিসি?
পিসিমা দীপ্তমের পাশটিতে বসল।দীপ্তমের হাত দু’টো চেপে ধরে ধরা গলায় বলল, শোন বাবা একটা কথা বলি। আমার তো সাতকুলে কেউ কোথাও নেই, রক্তের সম্পর্ক ধরলে শুধু তুই-ই বেঁচে আছিস, আমি আর ক’দিন বাবা….. বলে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল।
দীপ্তম দেখল পিসির চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। এই জল সুখের নাকি দুঃখের বুঝতে পারল না। পিসি কাপড়ের খুঁটে চোখ মুছে আবার কথা বলল, বলছিলাম কি বাবা আমার এই ঘর-বাড়ি,জমি-জায়গা সব তো লোকে লুটে-পুটে খাবে;তাই মরার আগে তোর নামে লিখে দিতে চাই।
দীপ্তমের হাত ছেড়ে পিসি তক্তাপোশ থেকে নীচে নামল, তারপর তক্তাপোশের তলা থেকে একটা কাঠের বাক্স বের করল।দীপ্তম কাঠ হয়ে বসে রইল, কি বলবে কিছুই খুঁজে পেল না।যেন বোবা হয়ে গেছে।পিসিমা বাক্সটা খুলতেই গোটা ঘরটা একটা আদিম গন্ধে ভরে গেল।বাক্সটা পুরনো কাগজপত্রে ভর্ত্তি।তার থেকেই একটা পলিথিনে ভরা কতকগুলো কাগজ দীপ্তমের হাতে তুলে দিয়ে বলল, এই ঘর বাড়ির দলিল গুলো রাখ বাবা। আমি মুর্খ মানুষ, বেশি কিছু জানি না।খুব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ কর,আমাকে যেখানে সইসাবুদ করতে হবে করে দেব। তাতে থানা,কোর্ট, অফিস যেখানেই যেতে হোক যাব। আমি আর এগুলোর বোঝা বইতে পারছি না।
দীপ্তম কাগজ গুলো হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলে, কিন্তু পিসি….।
না বাবা না।আমাকে বাধা দিস না। মরার আগে এই কাজটা অন্তত করে যেতে দে, নাহলে মরেও যে শান্তি পাব না।
পিসিমার দেওয়া দলিল গুলো একটা সুখের বাতাস বয়ে আনল ঘরে,তার প্রমাণ পেল দীপ্তম রাতে শোবার সময়। সুজাতা আদরে-আদরে ভরিয়ে দিল,খুব খুশি হয়েছে ও।
দীপ্তম বলল,তোমার নরকবাস থেকে একটা মুক্তির পথ পাওয়া গেল তাহলে।
সুজাতা খিলখিল করে হাসল।
বলল,শুধু কী আমার, তুমি খুশি হওনি?
আচমকা এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেল দীপ্তম, যেন ইলেকট্রিক শক খেল। একটু অন্যমনস্ক হয়ে বলল,আসলে কী জানো সুজাতা,আমি তো কোনোদিন পিসির প্রতি কোনো কর্তব্যই পালন করিনি। বাবা যেমন পিসিকে সাহায্য করত, আমারও উচিত ছিল। হয়ত পিসি সেই জন্যেই আমাদের বাড়ি আসা বন্ধ করে দিয়েছিল। আমাকে যে এত স্নেহ করত পিসি তার কোন দামই দিতে পারিনি।
একটা ঘোরের মধ্যে থেকেই কথা গুলো বলল দীপ্তম। তারপর পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল।
সুজাতা বলল, বাড়িটা কেমন বটে গো, খুব বড় নাকি?
আমাদের বাড়িটার মতোই,তবে পুরোনো বাড়ি তো রং-চং উঠে গেছে। ভালো করে সারিয়ে নিলে দারুণ হবে, সেই সঙ্গে আর একতলা তুলতে পারি।
দীপ্তম সুজাতার বুক থেকে শাড়িটা সরিয়ে পেটে হাত রাখল, বলল, এবার থেকে তো আমরা দু’জন নয় -আরও একজন আসছে, কী বলো?
ফেঁট! কী করছ ফাজিল কোথাকার,ছাড়ো।
দীপ্তম হাতটা সরিয়ে নিলো। কিছুক্ষণ দু’জনেই চুপচাপ। রাত গড়িয়ে যাচ্ছে সুখের সিঁড়ি বেয়ে। বাইরে চাঁদ উঠেছে,সেই জোত্স্নার আলো কিছুটা জানালার পাল্লার ফাঁক দিয়ে চুরি করে ঢুকে পড়ছে। হাইওয়েতে দু’একটা গাড়ি ছুটে যাচ্ছে নিঃস্তব্ধতাকে খান খান করে ভেঙে দিয়ে। দীপ্তমের চোখের সামনে শুধু পিসিমার মুখটা ভেসে উঠছে। সেই চোখের জল…সেই কান্না জড়ানো গলার আওয়াজ…..। ওর বিবেকবোধ ওকে নাড়া দেয়। না আর নয়! প্রত্যেক মাসে পেমেন্ট তোলার সময় কিছু টাকা দিয়ে আসবে পিসিকে। ও ছাড়া আর কে আছে পিসির!
Nine Things That Your Parent Taught You About Only Fans Pornstars Kayleigh Wanless only fans Pornstars kayleigh wanless
20 Things You Need To Know About Online Store Uk Cheapest vimeo.com
Are You Responsible For An Online Shopping Sites Clothes Cheap
Budget? 12 Tips On How To Spend Your Money Malleoloc 2 Ankle Brace (Lesli)
Five Affordable SEO London Lessons From The Pros Affordable Local Seo packages
Guide To Starter Kit Avon: The Intermediate Guide Towards Starter Kit Avon starter
kit avon (https://Site-9123568-4781-5173.mystrikingly.com/)
See What Asbestos Lawyer Tricks The Celebs Are
Using asbestos Law
The Malpractice Legal Success Story You’ll Never Believe Malpractice Lawsuits
10 Unexpected Online Clothing Sites Uk Tips High-Quality Audio Usb Headset
What’s The Current Job Market For Top Pornstar Only Fans Professionals?
top pornstar only fans
5 Motorcycle Accident Lawsuit Projects For Every Budget motorcycle accidents
20 Amazing Quotes About SEO Applications solution
10 Misconceptions That Your Boss May Have Concerning Replacement Porsche Key Fob programmed
Why Nobody Cares About Slot Updates new Slots
The 9 Things Your Parents Teach You About CSGO Cases Ranked Csgo cases
How You Can Use A Weekly Glazing Repairs Near Me
Project Can Change Your Life jerealas
Driving Traffic – Great Article Writing Techniques 검색엔진최적화 배우기
Top Reasons To Read An On-Line Casino Blog 좀비고 에볼루션, https://www.yazzle.ru/,
Roulette Professional – Cash Retraction Example 프라그마틱 정품확인방법
How To Explain Commercial Coffee Machines To Your Boss coffee Maker Price
Quiz Nights Or Casino Evenings – Different Approaches To Spend Week
End 프라그마틱 순위
5 Killer Quora Answers On Seo Search Engine Optimization Seo search Engine Optimization
20 Tools That Will Make You Better At Luton Door Panels Window Doctor
10 Places That You Can Find CS GO Case Battle Case Opening
5 Killer Quora Answers To Fold Away Treadmill fold Away treadmill
Don’t Believe In These “Trends” About Adult ADHD Test
adhd test free
The Most Hilarious Complaints We’ve Heard About Car Key Programmer car key programer
The 12 Most Popular SEO Consulting In London Accounts To Follow On Twitter local seo consultant london – Winnie –
Poker Strategy – Types Of Poker Players 다바오
머니상 (http://www.metooo.es)
A Guide To Affordable SEO Company London From Start To Finish freelance
seo london (tst.ezmir.co.Kr)
15 Things You’re Not Sure Of About Realistic Sex Doll Sex
how realistic are sex dolls (maps.google.hr)
Content Marketing Consultant Tools To Improve Your Daily Life Content Marketing Consultant Trick
That Should Be Used By Everyone Be Able To content marketing consultant – cameradb.review –
Guide To Situs Togel Dan Slot Terpercaya: The Intermediate
Guide In Situs Togel Dan Slot Terpercaya situs Togel Dan slot Terpercaya
Article Marketing – The Resource Box – A Moment
For Action seo 최적화
The Under-Appreciated Benefits Of Best SEO Agency Search Engine Optimisation Agency