রাত থেকে ভোর হচ্ছে, কিন্তু দু’চোখের পাতা কিছুতেই এক হচ্ছে না! রাতে কিছুতেই ঘুম আসছে না। এ দিকে দিনের বেলায় ক্লান্তি, ঘুম ঘুম ভাব আর অস্বাভাবিক জড়তায় কিছুতেই কাজ করতে পারছেন না! নিজেকে সজাগ রাখতে কাপের পর কাপ চা-কফি খাচ্ছেন। কিন্তু তাতেও লাভ হচ্ছে না মোটেই! এ রকম অবস্থা দিনের পর দিন চলতে থাকলে দেরি না করে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। কারণ, অনিদ্রার সমস্যা শরীরের আরও অনেক অসুখের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবার ছাড়াও মানুষ ২ সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু ঘুম ছাড়া ১০ দিনের বেশি বাঁচা সম্ভব নয়। প্রয়োজনের তুলনায় ঘুম বেশি বা কম হলেই তা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বেশি ঘুমানো, কম ঘুমানো, অনিদ্রা, ঘুম পাতলা হওয়া— ঘুম নিয়ে এই সব নানা জটিলতার কারণে আমরা আক্রান্ত হই এমন সব মারাত্মক রোগ-ব্যধিতে যেগুলি সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। এ বার দেখে নেওয়া যাক ঘুম সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আমাদের শরীরে কী কী রোগ-ব্যধি বাসা বাঁধতে পারে।
স্লিপ প্যারালাইসিস: স্লিপ প্যারালাইসিস। এই রোগটিকে আমরা অনেকেই বলি ‘বোবায় ধরা’। ঘুমের সময় কোনও ভয়ের স্বপ্ন দেখে অদ্ভুত কিছু থেকে বাঁচার চেষ্টায় হাত-পা নাড়ানোর চেষ্টা করেন অনেকেই। কিন্তু কোনও ভাবেই শরীরটাকে নাড়ানো যায় না। এই সমস্যায় কম বেশি সকলেই পড়েছেন। কিন্তু কেউই বিষয়টিকে তেমন পাত্তা দেন না। কিন্তু এটিও আসলে একটি রোগ। অনিয়মিত ঘুমের সময়ের পরিবর্তন এবং অনিদ্রাজনিত কারণে এই রোগটি হয়।
এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম: গভীর ঘুমের মধ্যে হঠাৎ অস্বাভাবিক জোরে কোনও শব্দে জেগে উঠেছেন কখনও? অনেকেরই এই ধরণের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ ভাবেন আসলেই কোথাও শব্দ হয়েছে। কিন্তু এটি একটি ঘুম সংক্রান্ত ব্যাধি। এর নাম ‘এক্সপ্লোডিং হেড সিনড্রোম’। যে শব্দটির কারণে ঘুম ভেঙ্গে যায় সেটি আর কোথাও নয়, রোগীর মাথার ভেতরেই হয়ে থাকে। খুব অদ্ভুত এই রোগটি বেশি ঘুমানোর কারণে হয়ে থাকে।
দুঃস্বপ্ন দেখা: অনেকেই আছেন যাঁরা ঘুমের মধ্যে প্রায়ই দুঃস্বপ্ন দেখেন। এটি যে এক ধরণের অসুখ তা জানেনই না অনেকেই! কিন্তু আসলেই ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখাও একটি ব্যাধি। মানসিক চাপ, অতিরিক্ত পরিশ্রম, অনিদ্রা বা না ঘুমানোর কারণে দুঃস্বপ্ন দেখেন অনেকেই।
প্যারাসমনিয়া: প্যারাসমনিয়া এক প্রকার ঘুম সম্পর্কিত ব্যাধি যা মানুষকে ঘুমের মধ্যে অস্বাভাবিক কাজ করতে বাধ্য করে। এই রোগের কারণে অনেক রকমের অপরাধ পর্যন্ত করে ফেলতে পারে মানুষ। আজ পর্যন্ত এই রোগের কারণ অনেক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। ঘুমের মধ্যে গাড়ি চালানো, অপরিচিত কারও বাড়িতে ঢুকে পড়া এমনকি হত্যার মতো গুরুতর অপরাধের সঙ্গেও অনেকে জড়িয়ে পড়েছেন প্যারাসমনিয়ার ফলে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অনিদ্রার, বিশ্রামের অনিয়ম মারাত্মক পর্যায়ে চলে গেলে এই ব্যাধি শরীরে বাসা বাঁধতে পারে।