কল্যাণী, ১৮ ফেব্রুয়ারি : বাংলা তথা ভারতীয় সংস্কৃতিতে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পাশাপাশি উচ্চারিত হয় গড়পাড়ের রায় বাড়ির নাম। রায় বাড়ির সন্তান সত্যজিৎ রায়, রবীন্দ্রনাথের ছাত্রও বটে। তাঁর জন্মশতবর্ষে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে শুরু হল দু’দিনের আন্তর্জাতিক আলোচনাসভা। চলবে ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বিষয়: সত্যজিৎ একাই একশো। প্রদীপ জ্বালিয়ে উদ্বোধন করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শংকর কুমার ঘোষ। “সত্যজিৎ একটা ডিকসনারী। কারণ বাংলা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির সব সুর মিশে গেছে সত্যজিতে এসে।” তিনি আরও জানালেন, “আমরা কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আগামী ২ মে-এর পর থেকে টানা এক বছর সত্যজিতের শিল্পভাবনা নিয়ে চর্চা এবং সত্যজিতের সাহিত্য, সিনেমার বিভিন্ন দিক ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে মাঝে-মধ্যেই তুলে ধরা হবে।” সত্যজিতের জন্ম ২ মে ১৯২১, শতবর্ষে পড়তে এখনও কিছু দিন বাকি? তবে এখনই কেন তাঁর জন্মশতবর্ষ নিয়ে উৎসব-অনুষ্ঠান? “সত্যজিতের পরিবার আমাদের প্রতিবেশী। সত্যজিতের পূর্বপুরুষরা বিহার থেকে বাংলায় এসে বেছে নিয়েছিলেন এই নদিয়া জেলাকেই। নদিয়ার চাকদহ-পালপাড়ায় দীর্ঘদিন বসবাস করেছিলেন তাঁদের পূর্বপুরুষেরা। পরে গিয়েছিলেন ওপার বাংলার ময়মনসিংহে।” বাংলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সুখেন বিশ্বাস আরও জানালেন, “নদিয়া জেলার সঙ্গে এই পরিবারের আত্মিক অনুভব দীর্ঘদিনের। কয়েকটি ছবির শুটিংও করেছেন এই জেলাতেই। তাই সকলের আগে আমরাই প্রথম সত্যজিতের জন্মশতবর্ষ পালনের স্বাক্ষর রাখলাম।” সত্যজিতের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। যেমন- ‘চারুলতা’, ‘মহানগর’, ‘কাপুরুষ মহাপুরুষ’। “মিসেস রায়ের একটা দুঃখ ছিল। সিনেমা করে একটা ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিছুই হল না। কিন্তু সত্যজিৎ রায়ের বাড়ি তো পৃথিবীময়। কারণ তিনি ঈশ্বর।” মাধবী মুখোপাধ্যায় সত্যজিতের পরিবারের স্মৃতিচারণায় জানালেন একথা। তাঁর মতে, “কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক যেভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে যে কোনও জটিল তত্ত্বকে সহজ করে তুলে ধরেন, ঠিক তেমনই সত্যজিৎ সিনেমা পরিচালনার ক্ষেত্রে শিল্পীদের কাজকে সহজভাবে বুঝিয়ে দিতেন।” জানা গেল, সত্যজিৎ রায় এক সময় দূরদর্শনের কর্তাদের জানিয়েছিলেন, তোমরা টিভিতে কীভাবে ছবি তুলতে হয়, জান না। তাই তোমাদের অনুষ্ঠানে যাব না। দূরদর্শন তৈরির এক বছর পর্যন্ত তিনি মুখ দেখাননি বা কোনও সাক্ষাৎকার দেননি। এমনই জানালেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, “ছবি করতে গেলে যে সুযোগ বা অর্থ দরকার তা সত্যজিতের ছিল না। তাই প্রথম জীবনে তিনি ভালো ভালো ছবি দেখার পাশাপাশি চিত্রনাট্য রচনা করেছেন। সংলাপ সাজিয়ে বা বর্ণনা দিয়ে বা বাক্যবন্ধে তিনি চিত্রনাট্য তৈরি করেননি। ছবি তৈরি করার চোখ, চেতনা ছিল বলেই সত্যজিৎ বিখ্যাত হয়েছিলেন। ছয় রকম অভিনেতা অভিনেত্রীদের জন্য তাঁর ছয় রকম পদ্ধতি ছিল। চিত্র পরিচালক, সাংবাদিক ঋতব্রত ভট্টাচার্যের মতে, সত্যজিৎ ঈশ্বর। ঈশ্বরের মতোই শিল্পের ভুবন রচনা করেছেন তিনি। ফিল্ম সোসাইটির জন্য আন্দোলন, বিষয় চলচ্চিত্রকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন তিনি। তাই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে সত্যজিতের তুলনা বারবার আসবে সত্যজিতের জন্মশতবর্ষে।